রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

আমাদের সংসার


আমাদের সংসার চা আর পাউরুটি'র মতো

চায়ের পেয়ালার সবটুকু চা-ই পাউরুটি খেয়ে নেয়

তারপর, আমি পাউরুটিটাই গিলে ফেলি।


দিনভর তুমি আমার সবকিছু, সমস্তই শুষে নাও

তারপর, আমি তোমাকেই গিলে ফেলি।


আমাদের এই ভালোবাসা - তৃপ্তির সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ।


চড়ুই



খুব ইচ্ছে হয়, 

একটা চড়ুই পাখির ঝাঁকে হারিয়ে যাই

তোমার বাসার পাশের আমগাছে

দল বেঁধে কিচিরমিচির করি

খুব ভোরে আমার ডাকেই তোমার ঘুম ভাঙুক। 


এরপর দখলবাজের মত করে 

আপন করে নেবো তোমার বারান্দা 

মঝে মাঝে খুব সাহস করে

দরজা পেরিয়ে ঘরের কোনায় এসে

ঝগড়ায় করে যাবো প্রতিদিন। 


আমি তোমার অভ্যাস হয়ে যাবো

তারপর টুপ করে দেবো নিখোঁজ উড়াল

তুমি আমাকে দেখবে এবং দেখবে না

আমি সর্বত্র আছি কিন্তু কোথাও নাই

উদ্ভ্রান্ত দুপুরের তোলপাড় নিয়ে 

তুমি অপেক্ষায় থাকবে, আমার উঁকিঝুঁকির.....


বিকেলের অবসাদ শেষে গোধূলির আয়োজনে

সহস্র চড়ুই পাখির কিচিরমিচিরের মাঝ থেকে 

তুমি কেবল আমার ডাক খুঁজে যাবে!!!


চিরায়ত প্রেমের কবিতা


আমি এমন একটা কবিতা লিখবো তোমার জন্য

তারপর কোন কবি

আর কোন প্রেমের কবিতা লেখার 

প্রয়োজন বোধ করবে না


একটা শ্রেষ্ঠ কবিতার তুমি.....

তোমাকে ছাড়া আর কোন প্রেম হবে না পৃথিবীতে

তোমাকে নিয়ে যুদ্ধ হবে প্রেমিকদের.....

তোমাকে ছাড়া আর কোন প্রেমের কবিতা হবে না 

তোমাকে নিয়ে যুদ্ধ হবে কবিদের..... 


তারপর 

প্রেমিকদের যুদ্ধের পর, 

কবিদের হতাশার দিনে,

আমিই তোমাকে জয় করে নেবো!

 

আমাকে তোমার দাবি দিয়ে দেয়া হলে,

চিরায়ত প্রেমের কবিতা লেখার জন্য 

আমি শব্দ আনবো কৃষ্ণগহ্বর খুঁজে 

বাক্য সাজাবো নীহারিকা-ছায়াপথ জুড়ে 

যেখানে থাকবে তারা আর নক্ষত্রের মেলা 

গ্যালাক্সির প্রতিটি কোণে, মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দুতে।


তারপর আর কোন প্রেম 

আমার কবিতা ছাড়া নিবেদিত হবে না.....  

আর কোন কবি,

প্রেমের কবিতা লেখার প্রয়োজন বোধ করবে না.....


সওদাগিরি

 


কষ্টটাকে কষ্ট করে

ফেলেছি খুলে হৃদয় থেকে

এখন এটা আমার হাতে

এবার হবে সওদাগিরি।


 

তোমার থেকে সব কিনবো

ফুল কিনবো, শখ কিনবো

হাতির দাঁতের নথ কিনবো

চিবুকের তিল, খোপার বাধন,

চোখের কাজল, বুকের কাঁপন

কিনবো তোমায় উজাড় করে.....


আমার যত কষ্ট আছে

দুষ্প্রাপ্য ..

অনেক দামী...

নিলাম করে প্রেম বাজারে...


 ভুল বাজারে লেনাদেনা

আর হবে না... আর হবে না।


এবার হবে সওদাগিরি

কতটা আর বিকোবে তুমি

কতটা আর বিকোতে পারো.....


কেনার পরেই ভাসিয়ে দেবো শুন্য করে

এবার তুমি শূন্য হবে

দেখবো কতটা ভাসতে পারো.....

অভিশাপ



আমি কেবল একটা শীতকাল বয়ে বেড়াচ্ছি
আমার হৃদপিণ্ড একটা কুয়াশার কুণ্ডলী পাকানো
রক্তপ্রবাহ জুড়ে বরফের দ্বীপ
আমি অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ জুড়ে একলা মানুষ
হয়তোবা কোনো বরফ যুগের কবর গলে
কোনো এক প্রজাপতির অভিশাপ
© রি হোসাইন

চলে যাওয়া পথ


রাস্তার মতো মনে হলেও
আমার হেটে যাওয়াটা মাটির পছন্দ নয়
ঘাসগুলো প্রতিবাদ করে
চেয়ে দেখি আমার ছায়া পড়েনি
ধূলিকণা খেয়ে নিচ্ছে দুপুরের রোদ
কিনারায়, গাছের পাতার উপহাস
কেবল সূর্যটা তাড়া দেয়
রাস্তার মতো মনে হলেও
আমার চলে যাওয়ার কোনো পথ নেই...
© রি হোসাইন
সব প্রতিক্রিয়া:
1.4K

জুতা

 যখন মানুষের ভিড় দেখি

তাদের জুতোর দিকে তাকাই
কি অদ্ভুত সব জুতা...
কোন কোনটা পায়ের চেয়েও বড়
কোন কোনটা পায়ের চেয়েও সুন্দর
অনেক সুন্দর পা দেখি জুতা ছাড়াই
অনেক সমৃদ্ধ পা দেখি ছেড়া জুতোয়
অনেক হতাশার জুতা দেখি
কোনটা আবার গর্বিত পরিপাটি
বাবাদের চটি ক্ষয়ে যাওয়া মলিন চপ্পল
রাজকন্যার হাইহিল দেখি
মায়েদের গুলো খুব দু‌‍‍‌র্লভ হয়
শুনেছি সেখানেই নাকি বেহেশত থাকে...
দীর্ঘদিন কালি না করা বেকারের
ভাঁজ পড়া ময়লা জুতা
আত্মহত্যার পথে হেঁটে চলা এলোমেলো পা
দেখি শ্রমিকের গোড়ালি ফাটা পায়ের বিষণ্ন চিত্রকর্ম
প্রেমিক প্রেমিকার স্বপ্নিল পথচলা দেখি
চুরি যাওয়া বরের নাগড়া
শিশুদের ঈদের নিষ্পাপ জুতা;
কি সুন্দর তার ঘ্রাণ
খুব অবাক হয়ে দেখি
উজাড় করে দেওয়া খেলোয়াড়ের
বৃদ্ধাঙ্গুল ছেড়া জুতা
জেল থেকে ছাড়া পাওয়া নেতার কোলাপুরি
ফেরারি গণতন্ত্রীর পলাতক যুথুবুথু জুতা
ভয়ধরা থপ থপ হিংস্র বুটের উদ্ধত তাণ্ডব দেখি
আমলার ঝা চকচকে আয়নার মতো
দেখি প্রেসিডেন্টের ভাবলেশহীন জুতা
যেমন দেখি দম্ভের
আবার দেখি
ফিতা ছেড়া শত সেলাইয়ের...
অত্যাচারীর জুতার সাথে সাথে
দেখি নিপীড়িতের নির্জীব জুতা
দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাই
তবু সবার পায়ের দিকে তাকাই,
তীব্র আকাঙ্ক্ষার চোখ খুঁজে বেড়ায়
এমন একটা জুতা...
সেটা হলো,
শূন্যে ছুড়ে দেওয়া বিদ্রোহের জুতা
◾
© রি হোসাইন

দুর্বৃত্ত

যখন

তোমার কথায় আমার মুখ ভরে থুতু আসে

অথবা বমি পায়

তখন তুমি মুখ বন্ধ না রাখলেও

আমাকে তো আমার মুখ বন্ধ রাখতেই হয়

যখন,

তোমার জন্য আর কোন শ্রদ্ধা নেই

ভক্তি নেই...

তবে তো বিভক্তিই ভালো

তবুও তুমি দখল নিতে চাও আমার সংসার

আমার গ্রীবা কিংবা যোনী

আমাকে তো আমার মুখ বন্ধ রাখতেই হয়

তোমার লকলকে জিভের দম্ভে

তোমার হাঁ করা মুখের গন্ধে

আমি নাক-মুখ চেপে রাখি

আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হতে থাকে

তারপরও

তুমি আমার বুকের পাঁজরের সমান্তরালে

দ্রুতগামী রেলগাড়ি ছোটাও 


 রি হোসাইন

প্রজাপতি নদীর গল্প

 আমি ঠিক প্রজাপতি হতে চেয়েছি

তারপর তোমার শরীরের; চুলে, হাতে, ঠোটে অথবা গ্রীবায়
কোথায় বসবো সেই দ্বিধায়
একজন্ম প্রেমকাল চলে যায়
আবার জন্মে
আমি আবার প্রজাপতি হতে চেয়েছি
এই ভাবে আমার সার্থক প্রেম গুলো
আজন্ম প্রবাহিত বয়ে যায়
প্রতিবার আমি প্রজাপতির বদলে নদী হয়ে জন্মাই!!!

কবস্থান রোড

 বনানীতে

যেখানে গোরস্থান আছে
চকচকে কবরগুলোর
পাশ দিয়ে রাস্তায়
পোর্শে, ল্যান্ড রোভার চলে, থেমেও থাকে
ভেতরে অনেকেই কাঁদে, কেউ কেউ হাসে
ভেতরে কেউ কি হাসে?
কেউ কি কাঁদে?
আমি দ্বিধাগ্রস্ত তাকিয়ে থাকি
কোনটা কবর?
কোনটায় বেশী অন্ধকার।
© রি হোসাইন

চড়ুই পাখিদের রুপকথা

 একঝাঁক চড়ুই পাখি এসে আমাদের প্রেম শিখিয়ে যায়

আর বারান্দা জুড়ে কিচিরমিচিরের গন্ধ রেখে যায়!
এরপর, আমাদের যাপনের উদযাপন জুড়ে ভেসে যায়
নি:শব্দের ব্যাথা ও বিষন্নতা।
.
আমাদের আলিঙ্গনের ইতিহাস জুড়ে মিশে যায়
চড়ুই পাখিদের সেই রুপকথা!

সিজদাহ্ (ছোট গল্প)


⬛
মতিউর রহমান সাহেব এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তাঁর দারুণ সুনাম। তাঁর উপজেলায় দল-মত নির্বিশেষে যে কেউ যেকোনো সময় তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে খালি হাতে ফেরত যায়নি কখনো। আল্লাহওয়ালা মানুষ। ৬ বার হজ করেছেন। এছাড়াও বছরে দুই-একবার স্বপরিবারে ওমরাহ করেন।
যদিও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেননি, তবে জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। তাঁর এলাকা ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী বিরোধী ঘাঁটি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের আগে পর্যন্ত এই এলাকায় খুব কমসংখ্যক নেতা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, মতিউর রহমান সাহেব তাঁদের অন্যতম। কয়েকবার তাঁর সাংসদ হওয়ার সুযোগ এলেও তিনি সুযোগ নেননি একবারও। কারণ, প্রতিবারই তাঁর মনে হয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তিনি আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারবেন না। নিশ্চিত বিজয় জেনেও তিনি নির্বাচন করেননি। আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিও ছাড়েননি। দলটাকে তিনি ভালোবাসেন। নির্বাচনে অন্য প্রার্থীর হয়ে তিনি দুই হাতে টাকা খরচ করেছেন, প্রশাসনের সাথে লিয়াজো করেছেন, ভোটের আগের ও পরের রাত জেগে দলের জন্য যা যা করার তিনি করেছেন। দলটাকে তিনি ভালোবাসেন। দলের হয়ে কোনো অন্যায়কে তিনি তেমন গুরুতর অন্যায় মনে করেন না। প্রতিবার নামাজের সিজদায় তিনি তাঁর কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, তাঁর দলের জন্য দোয়া চান, দেশের জন্য দোয়া চান।
১৫ই জুলাই রাতে তিনি স্বপরিবারে ওমরাহ থেকে ফিরলেন। ঢাকা থেকে মফস্বলের তাঁর বাসায় আসতে আসতে ১৬ই জুলাই ভোর হয়ে গেছে। ফজরের নামাজ আদায় করে তিনি দীর্ঘ ঘুম দিলেন। তাঁর যখন ঘুম ভাঙল, তখন ভরদুপুর। জোহরের ওয়াক্ত যায় যায়। মতিউর রহমান সাহেব হন্তদন্ত হয়ে ওজু সেরে নামাজে দাঁড়ালেন। এক পর্যায়ে রুকু করে সিজদায় মাথা রাখতেই তিনি প্রচণ্ড উত্তাপে এক প্রকার ছিটকে গেলেন। তিনি কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না যে কী হলো তাঁর সাথে? তাঁর নামাজ ছুটে গেছে। তিনি সিজদার জায়গায় হাত রাখলেন, এবং সেটা খুবই স্বাভাবিক। মখমলের জায়নামাজ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, অনেকটা শরৎকালের ভোরের মতো স্নিগ্ধ এবং শান্ত। তিনি আবার নামাজ শুরু করলেন। খুশু-খুজুর সাথে তাকবির, সানা, কিরাত, রুকু শেষ করে সিজদা। কিন্তু এবারও প্রচণ্ড উত্তাপে আবার ছিটকে গেলেন। এত উত্তাপ; তাঁর কাছে মনে হলো এ পৃথিবীতে এত উত্তাপ হতে পারে না। এবার তিনি ভয়ংকর বিভ্রান্ত হলেন। বুঝতে পারলেন না, কী হচ্ছে তাঁর সাথে।
তিনি অন্য ঘরে অন্য জায়নামাজ নিয়ে আবার নামাজে দাঁড়ালেন এবং একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন। ইতিমধ্যে জোহরের ওয়াক্ত শেষ। তিনি ভাবলেন, জোহর ও আসরের মাঝে খুব সামান্য একটা সময় নামাজের জন্য মাকরূহ সময় থাকে, তিনি হয়তো সেই সময় নামাজ আদায় করছিলেন বলে এমনটা হচ্ছে। খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি নামাজ পড়েন এবং নামাজ কাজা করার ইতিহাস তাঁর কমই আছে। এইসব ভেবে তিনি দুপুরের খাবার খেতে গেলেন। বাসায় কুরবানির গরুর মাংস রান্না হয়েছে। মুখে দিতেই তিনি ভিন্ন স্বাদ পেলেন। কেমন জানি ঘামের গন্ধ, রক্তের গন্ধ এরকম মনে হচ্ছে। তিনি ঠিকমতো খেতে পারলেন না। কয়েকটা লোকমা কোনোরকমে গিলেই তিনি মসজিদের দিকে রওনা দিলেন।
এই মসজিদটি তিনিই করে দিয়েছেন। তাঁর বাবা ফজলুর রহমানের সাথে মিলিয়ে মসজিদের নাম রেখেছেন বায়তুল ফজল মসজিদ। মফস্বল শহরের এমন মসজিদ মেলা ভার। তিনতলা মসজিদ, পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আর মার্বেল পাথরের মেঝে, দারুণ নকশা করা একাধিক মিনার। জানাজা আর ঈদের নামাজের জন্য বিশাল মাঠ, তাও আবার চারিদিকে ঘেরা। অনেকগুলো দোকান মসজিদের আওতায়। এর আয় দিয়েই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন আর খতিবদের বেতন ছাড়াও বছরের কয়েকটা মাহফিল হয়। মসজিদে এখনো আসরের আজান না হলেও মতিউর রহমান সাহেব মসজিদের দিকে আসছে দেখে দলে দলে মানুষ মসজিদের দিকে আসছে। কারণ তিনি সদ্য উমরাহ করে এসেছেন। লোকজন তাঁর সাথে কোলাকুলি করার জন্য ছোটাছুটি করছেন।
মতিউর রহমান সাহেব অন্য সময় এই ব্যাপারটা খুবই উপভোগ করতেন। কিন্তু আজ তিনি অস্বস্তি বোধ করছেন। তিনি যার হাত ধরছেন, যার সাথেই কোলাকুলি করছেন সবাইকে তাঁর মৃত মানুষের মতো ঠান্ডা মনে হতে লাগল। তাঁর গা গুলিয়ে আসতে লাগল। ইতিমধ্যেই আজান হয়ে গেছে। তিনি একপ্রকার ঠেলে ঠুলে মসজিদে ঢুকে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন। আগে তাঁকে জোহরের কাজা নামাজ আদায় করতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ, দামী কার্পেট আজ একটু বেশী ঠান্ডা মনে হচ্ছিল। এবার তিনি নামাজে কোনোভাবেই খুশু-খুজু আনতে পারলেন না। নামাজে দাঁড়াতেই তাঁর আতঙ্ক শুরু হয়ে গেল। তিনি আতঙ্ক নিয়েই কিরাত করে রুকু করলেন। সিজদায় গিয়ে আবার একই পরিণতি। সিজদার স্থান প্রচণ্ড গরম। কপাল ছোঁয়ানো যাচ্ছে না। তিনি ছিটকে গেলেন আর জ্ঞান হারালেন।
লোকজন ধরাধরি করে তাঁকে বাসায় নিয়ে এলেন। তাঁর জ্ঞান ফিরেনি। ডাক্তার এসে তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছুই পেলেন না। তাঁর প্রেসার ঠিক আছে, পালস ঠিক আছে। শরীরের তাপমাত্রা ঠিক আছে। কিন্তু তাঁর জ্ঞান ফিরেনি। ডাক্তার খুব দ্রুততার সাথে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট এনে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করালেন। তাঁর লিপিড প্রোফাইল, ক্রিয়েটিন, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে সবকিছু ঠিক আছে। ডাক্তার তাঁর কোনো সমস্যা খুঁজে পেলেন না। উমরাহ হজ থেকে আসা অবধি তিনি টিভি কিংবা স্মার্টফোন খুলে দেখেননি। তৎক্ষণাৎ রাজনীতি সম্পর্কে কোনো খোঁজ তিনি এখনো পাননি। ডাক্তার কিছু ধরতে না পেরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিলেন।
লম্বা সময় পর তাঁর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু তিনি ঠিক বুঝতে পারছেন না কী হয়েছে। তিনি নিজেকে চিনতে পারলেন না, অন্য কাউকেই চিনতে পারলেন না। তাঁর কেবল মনে হতে লাগল, তাঁকে নামাজ পড়তে হবে, জোহরের নামাজ। তাঁর মনে হতে লাগল, তাঁর নাম আবু সাঈদ। তাঁর মনে হতে লাগল, তাঁকে নামাজ পড়তে হবে, জোহরের নামাজ। তিনি হাসপাতালের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন। ইতিমধ্যে দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তাঁর মনে হতে লাগল, তাঁর সিজদার জায়গায় আল্লাহ দোজখের একটা টুকরো রেখে দিয়েছেন। তাঁর মনে হলো, তাঁর দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তাঁকে পুলিশ গুলি করবে। তারপর তিনি জোহরের নামাজ আদায় করতে পারবেন। সিজদা দিতে পারবেন।

© রি হোসাইন 

খারাপ দুপুর


◾
খারাপ দুপুরে বৃষ্টি হয়
ক্ষুধায় মিশে যায় ভাত-ঘুম
আহা, ঝুম বৃষ্টি, ঝুম...
ক্ষুধায় কাঁতরায় ভাত-ঘুম!
©
রি হোসাইন

নিয়ন্ত্রণ


শরীরের দৃশ্যমান অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো পরখ করছি
হাতের আঙুল, কবজি, কুনুই
হাঁটু থেকে কান, মাথা...
আমার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত চোখ, চামড়া, যৌনাঙ্গ
নাভীর ভাঁজ, গুহ্যদেশ, নাকের ফুটো, জিহ্বা...
সবকিছুই আমি,
আমার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত
দাঁতগুলো কিছুটা বাচাল
এবং তারা দেখিয়ে দিলো আলজিভ...
আবিষ্কার করলাম
আমার দৃশ্যমান অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে
আলজিভ আমার নিয়ন্ত্রণে নেই...!!!
© রি হোসাইন

শব্দ


◾
পৃথিবীর সমস্ত কবিতা
আমার মধ্যরাতের সিঁথানে জড়ো হয়
আমার দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া পৃথিবীর এক টুকরো অন্ধকার
সেইসব শব্দের ভিতর তন্নতন্ন করে খুঁজে
একটা হারিয়ে যাওয়া শব্দ...
আমার তখন প্রচণ্ড দুঃখবোধ হয়
কোন কবি লেখেননি, মিল্টন, কাভাফি
গল্প বলে যাননি হোমার
উদ্ভ্রান্ত ঈশপের নীতিবাক্য থেকেও উধাও হয়ে গেছে
যেই শব্দ পৃথিবীর কেউ উচ্চারণ করেনি
আজন্ম জন্মে যাচ্ছে...
আমার ভিতর....
সেই চিৎকার শুনে নিও
আমার মৃত্যুর পর...
© রি হোসাইন

জন্ম, যুদ্ধ আর প্রেমের গল্প



◾
তোমার তো জানাই আছে
দুপুরের ঘুমের সাথে আমার শত্রুতার ইতিহাস
তুমি তো জানোই...
আমার হাড়গোড় জুড়ে, পায়ের অঙ্গুলির নখে
কেবলই রৌদ্রের উপহাস
আমাদের ক্ষুধার্ত আলিঙ্গন জুড়ে
ক্লান্তিকর রাত হয়েছিল উর্বর
সেই তৃপ্তির জেগে থাকা...
সাক্ষী ছিল কুয়াশায় জড়ানো সূর্যোদয়
তুমি তো জানোই
প্রতিবার, অসংখ্য বার
তোমার জন্য আমাকে জন্মাতে হয়...
একটা জীবনের সাথে
বিষ মাখা দুপুরের চিরায়ত যুদ্ধ
প্রতিবার জয়ী হয়ে একটা ক্ষুধার্ত রাত পেতে হয়
তোমার তো জানাই আছে
তোমার জন্যই বারবার আমাকে জন্মাতেই হয়।
© রি হোসাইন

 কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ কে উৎসর্গ করে লেখা... আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করুন.. আয়ু বৃদ্ধি করুন

রোগাক্রান্ত

◾
আমার অদ্ভুত রোগটিতে
ক্রমাগত আমি আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি
সেই যে, তোমাকে খুঁজে পাবার পর থেকে
আমার চূড়ান্ত বসবাস এখন রোগটির ভেতরে।
সেই যে, তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে
তোমাকে স্পর্শ করার পর থেকে আমি আর কিছুই ছুঁই না, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম আর স্বপ্ন
কোনো কিছুই যার যার অবস্থানে নেই
সম্ভবত মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি মিশে গেছে অ্যান্ড্রোমিডায়।
তোমাকে দেখার পর থেকে
আমি যেন দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছি আর
যা দেখার তোমার চোখ দিয়ে দেখি...
এবং
আরও বেশি আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি
তোমার হাত ধরে চষে বেড়াচ্ছি তাবৎ দুনিয়া
তোমাকেই খুঁজতে...
তোমাকে খোঁজার রোগেই রোগাক্রান্ত আমি।

© রি হোসাইন  

মহাজাগতিক


◾
আমাকে নক্ষত্র বানিয়ে দেওয়া হলো
তারপর থেকে জ্বলছি...
আমার ঘূর্ণন থেকে ছিটকে পড়া স্ফুলিঙ্গ
সুখে থাক
একটা পৃথিবী হয়ে, আর তারও
একটা চাঁদ হোক...

© রি হোসাইন

পথ নির্দেশিকা


◾
ভিতরে...
এক ঝাপটা বৃষ্টি
আর,
হাহাকার হেঁটে চলা জুড়ে
কী খোঁজে আপন দৃষ্টি?
তোলপাড় ঢেউ?
নাকি আর কেউ...
চোখের গতিবিধি লক্ষ্য করুন।
কোন দিকে তাকায়?
কোন দিকে ভালোবাসা পায়?
কোন দিক ঘৃণায় ডুবে যায়...?

ভেজিটেরিয়ান


◾
খাদ্য হিসেবে অখাদ্য হয়ে গেছে মানুষ..
স্তনপিণ্ডের চেয়ে বেশি দামে বিকোয় ডাল ফ্রাই,
আলু-কপি, মটর-পনির।
ভেজিটেরিয়ান প্রস্টিটিউট খুঁজে খুঁজে
হয়রান হয়ে গেছে ভেগান যুবক,
হৃদয় ভেঙে গেছে তার...

মাতাল উড়াউড়ি

 তুমি তুখোড় উড়াও ঘুড়ি

এক একটা স্বপ মাখা ঘুড়ি
তোমার ঘুড়ির আমি একটা
মাতাল উড়াউড়ি
◾
© রি হোসাইন

তোমাকে সামনে পেলে

তোমাকে সামনে পেলে,

আমি কি করবো?

ধরে নাও ফুটপাতের চায়ের দোকানে,
এক কাপ চায়ের চুমুক,
হঠাৎ সামনে পড়লে তুমি..
সে কি চুম্বন হয়ে যাবে তোমার ঠোঁটে?
অথবা,
৬ নাম্বার বাসে, পেছনে সিটের এক কোনায়
হাটুজোড়া ভাজ করে সামনে সিটে ঠেকিয়ে
ঠিক বসা নয়, আটকে আছি.. এমন সময়
তুমি পেছনের দরজা দিয়ে উঠলে
আমি দাড়াতে পারবো ভেঙেচুরে?
কিংবা
সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে, চলে যাচ্ছি দুবাই
কাজের সন্ধানে, ফ্রী ভিসায়, রঙিন স্বপ্ন চোখে
বোডিং নিয়েছি, এখন ইমিগ্রেশনে...
পাসপোর্টএ সিলও পড়ে গেছে..
লিগ্যালি আমি এখন দেশের বাইরে
এমন সময় তুমি আরেকটা লাইনে,
সবুজ পাসপোর্ট হাতে নিয়ে অপেক্ষায়?
আমি কি করবো?
ছিড়তে পারবো টিকেট? ছাড়তে পারবো স্বপ্ন?
আমি কি ফিরতে পারবো এইটুকু পথ,
ধরতে পারবো তোমায়?

অবসান

 

এরপর একদিন অপেক্ষার অবসান হলো

আমাদের দেখা হলো

তুমি জানলেই না, অথবা আমিও জানলাম না

কিংবা দুজনের কেউই না।  


কিন্তু বারবার মনে হলো; যাক দেখাতো হয়েই গেলো ...

আর জ্যামিতি শাস্ত্র তুচ্ছ করে

দুটি সমান্তরাল রেখা পরস্পরকে ছেদ করে চলে গেলো।


কেউ জানুক আর না জানুক

একে অপরের অপক্ষের অবসান হলো

আমাদের পরিচয় জমা রাখা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলো

বহুদুরে উড়ে গেলো প্রজাপতি হয়ে

এ যেনো একটা নিরাপরাধবোধ অনুভূতি, শিশুর পাপের মতো


এরপর একদিন দুজনার উচ্ছ্বাসিত হেঁটে চলা পথে

যখন আর কেউ কারো পথ চেয়ে নেই

দেখা হলো কিনা হয়ে যাবে; কে জানে!


 এখন আর আমরা তো পরিচিত নই.....

অপেক্ষা

 


দেখা হবার অপেক্ষাতে যাপন আমার.....

একদিন দেখাতো হবেই


তারপর একদিন দেখা হবে

কিন্তু;

কেউ কারো কুশল জানতে চাইবো না,

যেনো প্রতিবেশী;  প্রতিদিন আমাদের দেখা হয়..... 


কোন উত্তাপ থাকবে না

কেবল দেখাই হবে, কিন্তু; কথা হবে না

দুজন চলে যাবো, না দেখার ভান করে

যেমনটা হয় দুজন ইর্ষাকাতর প্রতিদ্বন্দীর ভিতরে।


দুর্বোধ্য অপরাধবোধে আমাদের চোখ

চোখাচোখি হতে আসহায় বোধ করে


অথচ দেখা হবে

একদিন দেখাতো হবেই

হয়তো; দেখা না হওয়ার মত করে!

পুনর্জন্ম

চলো নতুন করে জন্মাই 

নতুন করে হাটি, বসি, দৌড়াই 

নতুন উচ্চারণে হাসি 

যখন শব্দের অস্তিত্ব ছিলো না 

তখন যেভাবে কথা বলা হতো 

চলো সে ভাষায় কথা বলি....

অন্যরকম যৌবনে এসো

অদ্ভুত ভালোবাসা বাসি

 

তারপর..

চলো সৃষ্টি করি নতুন অভিধান.. 

নতুন বসন্ত আর বর্ষার সংবিধান 

চলো গড়ে ফেলি প্রেম,

প্রেম আর প্রেম

তারপর.....

সৃষ্টি করি নতুন এক প্রাগৈতিহাসিক প্রজন্ম। 


চলো, ভুলে যাই বর্তমান, অতীত এবং সবকিছুই, 

কিংবা মরে যাই

তারপর... 

চলো নতুন করে জন্মাই.....