ছোট গল্প

পাপ পুণ্য আর আম 

বড় বাজারে পিছন দিকে রাস্তাটা জনসাধারণ খুব একটা ব্যবহার করেনা কারণ রাস্তাটা এবড়ো খেবড়ো. এই রাস্তাটা দিয়ে শুধু পাইকারী পণ্য গুলো যাতায়াত করে. আর বাজারের পেছন দিকের বাসাবাড়িতে থাকে এমন লোক গুলো মাঝে সাজে এই রাস্তা দিয়ে যায়. নুর উদ্দিনের জুতা মেরামতের টং দোকানটা এইখানেই. খিটখিটে মেজাজের নুর উদ্দিন লোকজনের ভীর খুব একটা পছন্দ করে না. দুচারটা পরিচিত মুখ-ই তার নিয়মিত গ্রাহক. নুর উদ্দিন একা থাকতে পছন্দ করে. কাজে কর্মেও সে খুব ধীর স্থির. কেউ কাজ নিয়ে তারাহুরা করলে তার বিরক্ত লাগে. সে কাজ করে পুরনো দিনের স্মৃতি গুলো মনে করে করে. তার স্ত্রী বাসা বাড়িতে কাজ করে আর একটা ছেলে স্কুলে যায়. সে দিনে যা আয় করে তা দিয়ে দিনের খাবার খরচ হয় আর তার স্ত্রী যেটা আয় করে সেটা দিয়ে বস্তি ঘরের ভাড়া আর বাচ্চার লেখাপড়ার খরচ চলে. অনেক টানা টানির সংসার. তাকে কম পক্ষে ৫০/৬০ টাকা আয় করতে হয় তাহলেই দিনের খাবার জোটে না হলে না. বস্তির মুদি দোকানে নুর উদ্দিনের বন্দোবস্ত করা আছে. আগের দিনের বাকি আজকে দিয়া আজকের খরচ বাকিতে নিতে পারবে. গত কয়েক বছর যাবত এভাবেই চলছে. আগের দিনের বাকি দেয়া হয়নি বলে অনেক দিন তাদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে. বস্তির দোকানদারেরা কোনো সময় বাকি জমায় না. এই ব্যাপারে তারা খুবই শক্ত . বস্তি এলাকায় বাকি জমলে সেই বাকি আর উঠে না.

আজকের দিনটা জানি কেমন. বাজারের পাইকারী মালামাল ছাড়া এমনিতে-ই এই রাস্তা ধরে খুব একটা লোকজন আসে না তার মধ্যে আবার গুরি গুরি বৃষ্টির কারণে রাস্তায় নোংরা পানি ও কাদায় একাকার হওয়ায় মানুষ জনে আনাগোনা নেই বললেই চলে।হাতে কাজ নাই, সেই সকালে জুতা সেলাই করে ৪০ টাকার কাজ হয়েছে মাত্র এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল. গত দিন বস্তির মুদি দোকানে একটু বেশি-ই বাকি পরে গেছে। ইদানিং জিনিস পত্রের দাম বেশি বেড়েছে। আজকে ৮০ টাকার কাজ করতে না পারলে কালকে হয়তো খাবার জুটবে না। নুরুদ্দিনের মনে নানা ধরনের দুশ্চিন্তা ভর করতেছে। ইদানিং নুরুদ্দিন খুব অল্পতেই দু:শ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে পারে। নুর উদ্দিনের মনটা উদাস গেল. এর-ই মধ্যে কিসের যেন একটা গন্ধ যেন সে পাচ্ছে. নুর উদ্দিন মস্তিস্কে খুব জোর দিল চেনা গন্ধ টাকে চিনতে. সে ভাবতে লাগলো এখন যেন বাংলায় কি মাস? অনেক কষ্টে নুরুদ্দিনের মনে পড়ল এখন আশাড় মাস. গন্ধটাও তার মনে পড়ল. আরে এটা তো আমের গন্ধ. আহা আম! কত দিন আম খায় না নুরুদ্দিন. খুব আম খেতে ইচ্ছা করছে তার. আমের কথা ভাবতে ভাবতে নুর উদ্দিন পুরনো দিনের ভাবনায় ডুবে গেল. কেমন ছিল তার শৈশব, কেমন করে তার এই অবস্থায় হলো, তারাতো হত দরিদ্র ছিল না. কিভাবে তার পা ভাঙ্গলো? কি ভাবে সে মুচিতে পরিনত হলো? ঊউহ নুরুদ্দিনের এসব ভাবতে আর লাগছে না. তার আম খেতে মনে চাচ্ছে. আহারে আম!! কি মধুর সেই ফল !!

নুরুদ্দিনের বাবা মুক্তি যুদ্ধে যাওয়ার পর আর ফিরে আসে নাই. তখন সে ছোট ছিল ৮/১০ বছরের বালক. তাদের গ্রামটার নামটাও এখন আর নুর উদ্দিনের মনে নেই. বাবা মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আসে নাই বলে চাচারা কিভাবে যেন সব জমি জমা নিয়ে নিয়েছে. তারপর নুর উদ্দিন ও তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে. মামার বাড়িতে উঠেছিল তারা. মামার অবস্থা ভালই ছিল. অনেক গুলা আমের বাগান ছিল পদ্মা নদীর পারে. সেই আমের বাগান গুলো ছিল বালক নুরের সব কিছু. আর এমন আষাড় মাস আসলে নুর উদ্দিন যে আমের ভিতর ডুবে থাকত সারা সময়. তারপর কি ভাবে যেন কি হয়ে গেল. মামারা গরিব হয়ে গেল. আম গাছ গুলো কি মারা গিয়েয়্ছিল? নাকি কেউ কেটে ফেলেছে? নুর উদ্দিন কিছুতেই মনে করতে পারছে না. শুধু মনে আছে মায়ের খুব অসুখ হয়েছিল, তাতে মামারা খুব দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল. তার মা কে তার মামারা নিয়ে তারা এই শহরে এসেছিল. তারপর এই শহরেই নুর উদ্দিনের মা মারা গেল। মা মারা যাবার পর মামারা গ্রামে ফিরে গেলেও কেন যেন নুর উদ্দিন আর ফিরে যায় নাই এই শহর ছেড়ে। আর কেন যে সে এই শহর ছেড়ে ফিরে যায় নাই সেটাও এখন আর নুর উদ্দিনের মনে নাই. আসলে নুর উদ্দিন এর অনেক কিছুই মনে থাকে না আর তাছাড়া এক  এর পর এক  জীবন যুদ্ধে এতটা দিশেহারা হয়েগেছে সে এই সব মনে রাখার মত সুযোগই তার আসে নাই. এর কাছে ওর কাছে এর হাতে ওর হাতে ঘুরে শিশু নুর এখন মধ্যবয়েসী নুর উদ্দিন যে কিনা এখন বয়েসের চেয়ে অনেক বয়েসী.

নুরের এখন আম খেতে ইচ্ছে করছে. আমের মৌ মৌ ঘ্রাণ তার সমস্ত সত্তা কে গ্রাস করে ফেলছে. অথচ তার কাছে আছে মাত্র ৪০ টাকা. আর দিনের যা অবস্থা তাতে আর কোনো খরিদ্দার আসবে বলে মনে হচ্ছে না. এক সের আমের দাম কত? নুর ভাবছে. গত বছর সে আম কিনে নাই তাই আমের দাম ও জানে না. নুর মনে করার চেষ্টা করতেছে সে শেষ কবে আম কিনেছিল? তার মনে নাই তবে মনে মনে একটা অনুমান করলো যে ৪০ টাকায় ১ সের আম পাওয়া যাবে বোধ হয়. কিন্তু যদি সে আম খরিদ করে তাইলে কালকে তো না খেয়ে থাকতে হবে. হু........ম...... নুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে. আহারে আম..........

নুরের আম খেতে খুব ইচ্ছা করছে. তার চোখে পানি এসে যাচ্ছে সে জন্য. আহা আজ যদি পা টা ঠিক থাকত তাহলে হয়ত সে আর একটু সচ্ছল থাকতো . অনেক না হোক বছরে একবার সে আম আর ইলিশ মাছ তো খেতে পারতো. এইবার তার আমের সাথে ইলিশ মাছের কথাও মনে পড়ল. আহা কি স্বাদের জিনিস বানিয়েছে আল্লাহ পাক. নুর ভাবতে লাগলো "আমি বেহেস্তে গেলে অবশ্যই আল্লাহ পাক রে বলমু যেনো সেইখানে আমারে আম আর ইলিশ মাছ দেওয়া হয়. যদি আম আর ইলিশ মাছ না থাকে তাইলে আমি ওই বেহেস্থে থাকুম না. আইচ্ছা আমি কি বেহেস্থে যাইতে পারুম?" নুর উদ্দিন এবার বেহেস্থ দোজখের ভাবনায় ডুবে গেল। নুর আবার ভাবতে লাগলো  "কেন পারমু না? আমি কি কোনো পাপ করেছি ? আইচ্ছা মনে কইরা দেখি?" নুর তার মস্তিক হাতরে বেড়াচ্ছে. কখনো সে কোনো পাপ করছে কি না. এটা তার মনে করতেই হবে. তার আম খেতে ইচ্ছা করছে. কিন্তু এই জীবনে তার আম খাবার আশা থাকুক বা না থাকুক পরকালের জীবনে কি সে আম খেতে পারবে কি না সেটা নিয়ে সে এখন খুব-ই চিন্তিত। তাকে সেটা জানতেই হবে. সে হাতরে বেড়াচ্ছে স্মৃতি. সে কি কখনো কোনো খারাপ কাজ করেছে? যার কারনে সে বেহেস্থে যেতে পারবে না? যার কারনে তার আম খাওয়া হবে না? অনেক কষ্ট করেও তার মনে পড়ল না যে সে কোনো পাপ করেছে কি না. কিন্তু তার মনে পড়ল তার পা হারাবার কথা. বস্তির পাশের রেল লাইনে আটকা পরা তার এক প্রতিবেশীর শিশু সন্তানকে রেলে কাটা পরা থেকে বাচাতেই তার এই অবস্থা. তার যখন এটা মনে পড়লো তখন খুশীতে তার চোখ ছলছল করে উঠলো. সে ভাবতে লাগলো " যাউক তাইলে তো পুণ্য কিছু করছি যার লাইগ্গা বেহেস্থে যাওয়া যাইবো. যদি পাপ কিছু ভুলে ভালে কইরাও থাকি তাইলে এইডা দিয়া শোধ হইয়া যাইবো. আহা আম..... বেহেস্থে যাইয়া আম খামু. আহা আমের ঘ্রাণে চারদিক যেন নেশা নেশা হইয়া যাইতেছে."

নুর উদ্দিন প্রতিদিনকার মত আপন মনের ভাবনার ভিতর ডুবে আছে. আজকের ভাবনা তার আম নিয়ে. ভাবনার সূত্রপাত হয় যখন সে পাকা আমের ঘ্রাণ পায়। তার টং দোকানের সামনের রাস্তা দিয়ে একটা পাকা আমের বাক্স বোঝাই একটা ঠেলা গাড়ি আসতে ছিল সেখান থেকে-ই ঘ্রানটা আসছিল। প্রথমে সে ঘ্রান্ টাকে চিনতেই পারেনি কেননা ইদানিং তার সৃতি ভ্রম হচ্ছে। এতক্ষণে নুর উদ্দিন তার টং দোকানের সামনে দিয়ে একটা ঠেলা গাড়ি আসতে দেখতে পেল. ভাঙ্গা রাস্তার কারনে ঠেলা গাড়িটা অনেক আওয়াজ করছে. নুর ঐদিকে তাকাতেই তার আরো একটা জিনিস চোখে পড়লো, সেটা হলো আম. ঠেলাটাতে আমের বাক্স. বাক্স গুলো মাঝখানে মাঝখানে ফাক. মইয়ের মত. সেই ফাক গুলো দিয়ে ভিতরে আম দেখা যাচ্ছে. ফজলি আম. নুর উদ্দিনের স্মৃতিতে ভেসে উঠলো তার মামার বাগানের আম, এই আম গুলো ঠিক সেই রকমই. নিজের অজান্তেই নুর উদ্দিনের একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেলো.........

রাস্তার ঝাকিতে আমের বাক্স গুলো একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে. তারমধ্যে একটা বাক্স এমন হয়ে গেছে যে একটা বড়সর আম বাক্স থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়বে পড়বে মতো মনে হচ্ছে. নুর উদ্দিনের চোখে পড়লো সেখানে. নুর উদ্দিন উত্তেজনা অনুভব করতে লাগলো. আমটা কি পড়বে? পড়লে সে কি করবে? কুড়িয়ে নিয়ে খাবে নাকি ফেরত দেবে? সে ভাবতে লাগলো "না.... কুড়াইয়া নিয়া ফেরত দিতেই হইবো. না হইলে গুনা হইবো. অন্যের জিনিস তো না কইয়া খাইতে নাই. জীবনে তো কখনো অন্যের জিনিস না কইয়া খাই নাই." আহা আম. নুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে......... ঠিক তখন ই তার দোকানের একেবারে সামনে এসে বাক্স থেকে আমটা পরে যায়. একেবারে সামনে. নুর উদ্দিন কি করবে গুলিয়ে ফেললো. উত্তেজনায় সে কাপতে থাকে. সে আমটা কুড়াতে ঝাপিয়ে পড়লো. কিন্তু সে ভুলে গেলো তার একটা পা নাই. ফলে সে আঘাত পেলো এবং সেখানেই তার মৃত্যু হলো.

নুর উদ্দিনের মৃত্যু হলো ................ একটা আম তার পুণ্য গুলোকে কে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে পারলো না. তার মৃত্যু হলো গভীর তৃপ্তিতে........................................................



সমাপ্ত

ঋণ 


তিনি এমন একজন. যার সাক্ষাৎকার নিতে পারাটা সে কোনো সাংবাদিকের কাছে স্বপ্নের মত. তিনি এমন একজন যিনি দুইবার নোবেল প্রাইজ নিতে অস্বীকার করেছেন. যিনি কখনো কোনো পুরস্কার গ্রহণ করেন নাই. তাকে যদি কখনো কোনো পুরস্কার দেওয়া গেলে সেই পুরস্কার সন্মানিত বোধ করতো. যিনি বর্তমান পৃথিবীর মানুষের কাছে দেবতার মত পবিত্র. তিনি এমন একজন লেখক যে কিনা সাধারণ মানুষের কথা গুলো এমন সাধারণ ভাবে তুলে ধরেছে যে সাধারণ মানুষের কথা গুলো হয়ে গেছে অসাধারণ. সেই মহান লেখকের সাক্ষাৎকার নেবার সুযোগ পেয়ে মার্কিন সাংবাদিকের জীবন ধন্য হয়ে গেল. এবং সেই বিশেষ ক্ষনটার অপেক্ষাতে সে খুব ই উত্তেজিত হয়ে গেল. কি করবে, কিভাবে যাবে, কি পরে যাবে, কি প্রশ্ন করবে এই সব ভেবে ভেবে একেবারে দিশেহারা.

মার্কিন সাংবাদিক সাহেব কে কষ্ট করে মহান ব্যক্তিটির বাড়িতেই আসতে হলো আর বাড়ি তা হলো বাংলাদেশের কোনো এক মফস্সল শহরের উপকন্ঠে. কারণ মহান ব্যক্তিটি নিজের এই ছোট্ট বাড়িতেই থাকেন এবং তিনি ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছাড়া আর কোনো কারণে বিদেশে বিভুইয়ে যান না. এমন কি বড় শহরেও না. যদিও সে প্রচুর ভ্রমন করেছেন দেশে বিদেশে কিন্তু সবটাই উদ্দেশ্য বিহীন. আর তাই মার্কিন সাংবাদিক সাহেব কে আসতেই হলো অজপাড়াগায় আর এতে সেই মহান মানুষটার প্রতি তার শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল.

আমি এত সাধারণ লেখক হয়ে সেই মহান মানুষটাকে নিয়ে গল্প লেখা আমার সাজে না. তারপর ও লেখতেছি মহান মানুষটির মহত্বকে পুজি করে. মহানেরা এত সাধারণের ভুল গুলো ধরে না. যাই হোক আমি খুব সীমিত আকারেই গল্প বলব কারন সেই মানুষটার ব্যাপারে বিস্তৃত কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব না.

মার্কিন সাংবাদিক যতই তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ততই অবাক হচ্ছেন. ততই তার শ্রদ্ধা বেড়ে যাচ্ছে. এক সময় যখন তিনি মহান ব্যক্তিটিকে প্রশ্ন করলেন: স্যার দয়া করে আপনি যদি আপনার কোনো ঋণ এর কথা বলেন বা আপনি কারো কাছে কোনো কারণে ঋণী এমন কিছু যদি বলতেন.

তিনি হেসে বললেন : ঋণ .... দেখুন আপনারা অনেক বড় মানুষের সাক্ষাৎকার নেন. আমি জানি না তারা তাদের অতিথ কে কিভাবে দেখে. কারন সেরকম সাক্ষাৎকার গুলো পরে আমি কখনো তাদের অতিথের বড় কোনো দুর্বলতা দেখি না. অথচ আমার অতিথ তো সুধু ঋণ আর ঋণে ভরা. একটা গল্প বলি,
সপ্তম শ্রেণীতে থাকা কালীন আমার বাবা অন্য আরেকটা মহিলাকে বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে অন্য শহরে চলে যায়. আমার এই বাড়িটা দিয়ে যায় আমার মায়ের মোহরানার বদলে. মোহরানা বুঝেন কি? সেটা হলো মুসলিম ধর্ম মতে স্বামীদের কাছে স্ত্রীদের একটা বিশেষ পাওনা. যা হোক আর আমাকে দিয়ে যায় সংসারের দায়িত্ব কারন আমি ছিলাম সংসারের বড় সন্তান. আমরা অনেকগুলো ভাইবোন ছিলাম. সেই সময় আমাকে বাধ্য হয়েই লেখাপড়া ছাড়তে হলো. আমি কাজ নিলাম এক মস্ত বড় কাপড়ের দোকানে. সেখানে অনেকগুলো কর্মচারী ছিল. সেই সাথে ছিল অনেক প্রতিযোগিতা. আমি কাজ শুরু করি খুব সামান্য বেতনে. যা দিয়ে আমার পরিবারের এক দেড় বেলার খাবার যোগার হত মাত্র. আমি যখন কাজ শুরু করি সেটা ছিল রোযার মাস. রোযা বুঝেনত? রোযা হলো মুসলমানদের একটা বিশেষ মাস ব্যাপী ধর্মীয় ইবাদত. সেটা আপনার জানার কথা. যা হোক আসলে ১মাস রোযার পরে আসে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব ঈদ . সেই সময় সবাই নতুন জামা কাপড় পরে, বাড়িতে মেহমান আসে আর বিশেষ কিছু রান্না বান্না হয়. সে উত্সবে স্বাভাবিক ভাবেই খরচ একটু বেশি-ই হয়. আমার কর্মক্ষেত্রের বাকি কর্মচারী রা মহা উত্সাহের সাথে যে যার কাজ করে যাচ্ছিল. কেন না তারা ভালো রকমের বোনাস পাবে. আর তা ছাড়া দোকানের মালিক বড় অঙ্কের যাকাত দেন কর্মচারীদের যার ফলে প্রতি বছর ঈদ ভালই কাটে তাদের. যাকাত বুঝেন তো? সেটা ও একটা ইবাদত যা হলো ধনীদের ধনের শতকরা একটা অংশ গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া. কিন্তু আমি যেহেতু নতুন তাই আমার তো কোনো বোনাস হবে না. কারন নিয়ম অনুযায়ী বোনাস পেতে হলে ছয় মাস কাজ করা লাগে. আমার মনে কোনো সুখ ছিল না. আর যাকাত সেটা তো আমি নিতে পারি না কেন না আমার পিতা আসলে তো গরিব ছিল না. আর তা ছাড়া যাকাত গ্রহীতাদের সমাজে একটু ছোট চোখে দেখা হয়. যা হোক এক সময় সেই বোনাস ও যাকাত দেবার সময় এসেগেল সবাই বেতন বোনাস ও যাকাত নিয়ে নিল ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে. আর আমি শুধু নিলাম বেতন. আমি কষ্টে কান্না ধরে রাখতে পারছিলাম না. আমার চোখে আমার ছোট ভাইবোনদের অশ্রু সজল চোখ ভাসতেছিল. তারপর ও আমি কাদতে পারি নাই তখন. কান্নাটাকে বুকের ভিতর এমন ভাবে দাবিয়ে রাখতেছিলাম যে আমার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল. কিন্তু এক সময় মালিক আমাকে ডাকলেন এবং বললেন আমি জানি এবার তোমার ঈদ খুব কষ্টে যাবে. তোমাকে আমি বোনাস দিতে পারতেছি না নিয়মের কারনে. যাকাত দিতে পারতেছিনা লজ্জায়. আমি দেখলাম আমার কষ্টে তার চোখ ছলছল করছে. তিনি আমাকে বললেন দেখো বাবা আমি তোমাকে কিছু টাকা ধার দেই. যা তুমি তোমার বেতন বাড়লে বা তোমার সমর্থ হলে শোধ দিয়ে দিবা. এবার আর আমি কান্না দমিয়ে রাখতে পারলাম না. এবং তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিলেন. আমি তার টাকা তা নেবার সময় একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম. সেটা কি জানেন? সেটা হলো আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি আর কোনো দিন ও তার টাকা তা ফেরত দেব না.
আমি এখনো সেটা ফেরত দেই নি.
এবার মার্কিন সাংবাদিক একটু হকচকিয়ে গেল............

প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে এমন কোনো প্রশ্ন ও উত্তর কোনটাই পাওয়া যায় নাই. আমি অনেক বার ভেবেছিলাম এত মহান ব্যক্তি কেন এই ক্ষুদ্র ঋণ টুকু শোধ করেন নাই?

সমাপ্ত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন